শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১২

কাফেলা- ছোট গল্প ( ৫.০৯.২০১২)

কাফেলা
পৌষের কনকনে শীত। চারদিকে ঘন কুয়াশা। রাতুল এসে জানলায় টোকা দিতেই ধরফর করে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসলাম। বাতি জ্বালিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দুইটা ছাপ্পান্ন ঝটপট উঠে মুখে বরফ সমান ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিলাম। ঢোলা পায়জাম আর মোটা ফুল হাতা শার্ট পরে ঘুমিয়েছিলাম। তার ওপরই কোনমতে মায়ের চাদরটা পেঁচিয়ে ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলাম। আমি আর রাতুল মিলে বাকি সবাইকে ডেকে তুললাম। কেউ এলো চোরের মত চুপিচুপি দরজা খুলে; কেউ এলো দেয়াল টপকে। আজ সবাই উপস্থিত। এ কাজে প্রতিদিন সবাই উপস্থিত থাকতে পারে না। মাথা গুনে দেখি ঠিক ঠিক নয় জন। রোজ যেখান থেকে শুরু করি ঠিক সেখান থেকেই শুরু করব।
আমি রাতুলকে বললাম আজকে কি শীতরে রাতুল। আর আকাশ থেকে বৃষ্টির মতন শিশির পড়ছে। কপালে আজ দুঃখ আছে রে।
রাতুল বলল আরে ধুর জোরে জোরে পা চালালে শীত কই পালিয়ে যাবে দেখবি।
এসব কাজে রাতুলই আমাদের অঘোষিত নেতা। প্রতিবার ওই সবাইকে এ কাজে একত্র করে। কন্ঠও দরাজ। তাই ঘোষণাটা ওই দেয়। আমরা শুধু শেষ শব্দে কন্ঠ মেলাই। ও শুরু করল- রোজাদার ভাই ও বোনেরা সেহেরী খাবার সময় হয়ে গেছে। সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। উঠুন...............উঠুন..............উঠুন................সবাই একত্রে জোড়ে লম্বা করে টেনে টেনে বলতে শুরু করলামওই শীতের মধ্যেই আমাদের কাফেলা জোরে জোরে পা চালিয়ে পাড়া মহল্লা ঘুরতে থাকল
একটি শীতের রাত যায় আর প্রতিক্ষা করি মাস শেষ হবার।
আমাদের দলের নাম “উত্তর পাড়া ইয়াং স্টার ক্লাব”গদবাঁধা যে সব নাম হয় আর কি। রোজা পনেরটা হতে হতেই ক্লাবের নামে রসিদ ছাপিয়ে আনলাম শহর থেকে৫-৭ টা রোজা বাকি থাকতেই বাড়ি বাড়ি নেমে পরলাম কাফেলার আদায়ের জন্য। কেউ বিমুখ করে না। সবাই হাসি মুখে কিছু না কিছু দেয়। তবে দু এক বাসায় দু তিন বার যেতেই হয় অগত্যা। সব আদায় শেষে জড়িয়ে দেখি হয়েছে ১২০৩৩ টাকাসবাই জানি এই টাকা এখন কেউ ছোঁবো না। এই টাকার একটা অংশ দিয়ে জামা কিনব; লাল, নীল, সাদা, কালো কত রঙের। জামা গুলো ঈদের আগের রাতে তা বিলিয়ে দেব যাদের জামা কেনার সামর্থ্য নেই তাদের মধ্যে। আর একটা অংশ যাবে স্থানীয় মসজিদে। আর আমাদের জন্য থাকবে কারও জন্য কিছু করতে পারার আত্মতৃপ্তি।
আমরাও একদিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরব। যার যার কাজ নিয়ে, জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরব। আবার নতুন “ইয়াং স্টাররা” এসে কাফেলার হাল ধরবে। এভাবেই জীবন বয়ে চলেছে অজানার উদ্দেশ্যে আর অজানা চলেছে অনন্তের পথে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন