কবি গরু
গল্পের আসর জমাতে পিয়ারু চাচার জবাব নেই। তার গলা যেরকম দরাজ গল্প
গুলোও ছাড়েন খাসা। একদিন এক আসরে চাচা বললেন- তবে কি জারিস দেশি জিনিস সব সময়ই
কেমন ছোট ছোট হয়। দেশি বড়ই, দেশি গরু, দেশি পেঁয়াজ, কুমড়া, ডিম সবার ওপরে দেখ এই
দেশি মানুষ গুলো গড়পড়তা কেমন নাতিদীর্ঘ রকমের। তা যা হোক জিনিস কিন্তু ভাই খাঁটি
যেমন স্বাদও খাসা। যাক ভালো জিনিসি কমই ভালো। না হয় ভালোর কদর থাকতো না। এই যেমন
ধর্ না আমি গত শাওন মাসে সাদা রঙের এক গাই গরু কিনলাম আঠারো হাজার টাকায়। বলবি
সস্তাই তো হলো। কিন্তু গরু দেখে সবাই বললো একি চাচা এই পেটমোটা মাথা সর্বস্ব
লিকলিকে কাঠির মতো গরু তুমি কোথায় পেলে? এতো দুই দিনেই মরে যাবে। আমি বললাম- এ কেমন
কথা হলো। হাড় জিরজিরে হলো কি হলো ঠিক মতো যত্ন নিলে দেখবি এই গরু রোজ তিন সের দুধ
দেবে। সোনার ডিম দিলেও অবাক হবো না।
কদিন যেতেই হঠাৎ একদিন নজরে পড়লো ওমা একি গরু গানের তালে তালে ঢুলছে।
আমি তো অবাক! আমার গরু নাচতেও জানে। মনে মনে বললাম এই নেচে নেচেই তো শরীরটা
খোয়ালে। অবশ্য ভুল ভাঙতে দেরি হলো না। কদিন নজর দিয়ে দেখলাম ও গরু সবসময় এমনিতেই
ঢোলে। ওর ঢুলুনি অসুখ আছে। আর কদিন বাদে নজরে পরলো গরুর মাথায় পেছনের পায়ে সেলইযের
দাগ। তখন বুঝলাম গরুটা কোনো গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছিল। কি আর করা। গরুটার বিশেষ
যত্ন নিতে লাগলাম। প্রত্যেকদিন ভূষি, চিটাগুড়, লবণ, ভাতের মাড় খাওয়াতাম। মাঝে মাঝে দেখতাম গরু মাঠে ঘাস
খাওয়া বন্ধ করে অবাক হয়ে কোথায় তাকিয়ে থাকতো। ঘাস খাওয়া যেত ভুলে। ভেবেচিন্তে
সিদ্ধান্ত নিলাম কার একসিডেন্টে গরুটার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
গরুটার যতই যত্ন নেই কোনো কাজেই লাগলো না, গরুটার স্বাস্থ্য ভালো না।
হওয়ার মধ্যে ওর বিশাল আকারের পেটটা আরো বিশাল হয়ে উঠলো আর শীর্ণ দেহটা শীর্ণই থেকে
গেলো। ওর পেট দেখে লোকে ওর নাম রাখলো পাওয়ার টিলা। পাওয়ার টিলারই বলো আর গুদাম
খানাই বলো দেশি জিনিস যে ভালো তা বুঝতে পারলাম ক’দিন বাদে। গরুর একটা বকনা বাছুর
হলো আর রোজ দেড় সের করে দুধ দিতে লাগলো। দুধগুলোও ঘন। অস্ট্রেলিয়ান গরু গুলি রোজ
নাকি ৫০ সের করে দুধ দেয় কিন্তু কি দেখ দুধ পানি বরাবর স্বাদ আর যা পাতলা। গরুটা
থেকে তাওতো কিছু পাওয়া গেলো। বাছুরটা একটু বড় হলে আমার বউ বললো ওটাকে হাটে দিয়ে
এসো একদিন হাটে নিয়ে গেলাম। দাম বললো বার হাজার টাকা। এত কমে বেচবো না বলে বাড়ির
জিনিস দড়ি ধরে বাড়িতে হাটিযে আনলাম। পরের হাটে দাম উঠলো চৌদ্দ হাজার। সেদিনও
ফিরিয়ে নিয়ে আসলাম। নিয়ত ছিলো আঠোর নিচে বিক্রি করবো না। তার পরের হাটে দামই করলো
না। হাটে গরুর দালালরা মশকরা করে বললো- ভাই গরুটাকে প্রত্যক হাটেই আনতে হয় বাড়ি
নিয়ে গিয়ে কি করবেন। এখানেই রাখার একটা পাকা বন্দোবস্তো করে যান দেখবেন টানাখিচার ঝামেলাটা আর থাকবে না।
বুঝলাম গরু বিক্রি করতে মাথা খাটাতে হবে। পরের হাটে মাথা খাটিয়ে
গরুটাকে নিয়ে গেলাম হাটে। ওমা দেখি গরু দেখতে ভিড় আর কমে না! কেন? না গরুর গায়ে
আর্টিস্টের কাছ থেকে বিশটাকা খরচ করে লিখে টানিয়ে দিলাম একটা লম্বা সাইনবোর্ড।
সেখানে লেখা ছিলো-
এই গরু দুর্ঘটনায় পরার পর এর চিন্তাশক্তি এত বেড়ে গেছে যে উনি কবি হয়ে
উঠেছেন। এখন প্রত্যেক দিন সকাল-বিকাল রুটিন করে কবিতা লিখছেন। নিচে প্রমাণ সরূপ
একটা কবিতা দেয়া হলো।
কবি গরু
আমি কবি গরু দেহ মোর সরু
পেট হলো মোটা দড়ি বাঁধা খোঁটা
লিখে লিখে গেল
দেহ গেলো চার
ঠ্যাং।
পাত কুয়ো ব্যাঙ
বলে নাকি আমি
গরু কবি
দুধ দেই হাল
দেই, লিখি বড় পদ্য
বিশ্বাস করো এই
লিখেছি যা সদ্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন