কুসংস্কার
জন্ডিস কোন রোগ
নয়। এটি রোগের একটি লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে মানুষের শরীরে বিলিরুবিন নামের হলুদ
এক প্রকার রঞ্জক পদার্থের (Pigment) পরিমাণ বেড়ে যায়। বিলিরুবিনের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ
( চোখ, ত্বক, হাত,পা, মুখ ইত্যাদি ) হলুদ হয়ে যায়। যাকে আমরা জন্ডিস বলে থাকি। গ্রাম্য ভাষায়
অনেকে কাওলা বলে থাকেন। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে,
বংশগত কারণে, ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়, অতিরিক্ত মদ্য পান করলে, পিত্তপাথুরীর
জন্য বা টিউমারের কারণে পিত্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে, লিভারে
ক্যান্সার ইত্যাদি কারণে জন্ডিস হতে পারে।
দেশের সর্বত্রই
শিক্ষিত অশিক্ষিত অনেকের মাঝেই বিভিন্ন কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। জন্ডিস হলে অনেক মানুষ
সচেতনতার অভাবে কিংবা অর্থনৈতিক কারণে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে কবিরাজের কাছে যান।
কবিরাজেরা এসব মানুষদের বিভিন্ন ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যেমন- ডাব
পড়া, লেবু পড়া, বন্য একপ্রকার গাছের মালা, চুনের পানি দিয়ে হাত ধোয়ানো, নিম পাতা
বাঁটা এবং চুনের পানি মিশিয়ে রোগিকে গোসল করানো, পেঁপেঁ গাছের শিকড় গলায় বাঁধা
ইত্যাদি। তবে এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। চুনের পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা শরীর
থেকে বিষ নামানোর কথা বলে কবিরাজেরা কিভাবে মানুষকে ফাঁকি দেন আজ আমরা সে সম্পর্কে
জানবো। চাইলেই খুব সহজেই আমরা ব্যাপারটি বাসায় বসে পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
কবিরাজেরা
যেভাবে আমাদের ফাঁকি দিয়ে থাকেন-
১। কবিরাজেরা
প্রতিদিন সকালে শরীর থেকে বিষ নামানোর কথা বলে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগির হাত চুনের
পানি দিয়ে ধুয়ে দেন। প্রথম দিন দেখা যায় হাত থেকে গাঢ় হলুদ রঙের পানি বের হচ্ছে।
ধীরে ধীরে এ হলুদ রঙের পানি বের হওয়া কমে যায়। সর্বশেষ দিন আর হলুদ রঙের পানি বের
হয় না। তখন কবিরাজেরা ঘোষণা দেন রোগি জন্ডিস মুক্ত।
২। আম গাছের
বাকলের খুব সামান্য অংশও চুনের পানির সংস্পর্শে আসলে চুনের পানি এবং আম গাছের বাকলের
মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত হয়। ফলে চুনের পানির রঙ হলুদ হয়ে যায়।
৩।
আর লোক ঠকানোর কাজে অবচেতন ভাবে কবিরাজেরা বিজ্ঞানের এই রাসায়নিক বিক্রিয়াটি কাজে
লাগান। প্রথমে আম গাছের বাকলের গুঁড়ো প্রয়োজন মাফিক তারা হাতের তালুতে ঘষে নেন। যখন
রোগির হাত ধুইয়ে দেন তখন কবিরাজের হাত থেকেই হলুদ রং বের হয় রোগির হাত থেকে নয়। ধীরে
ধীরে হাতে আম গাছের বাকল ঘষার পরিমাণ কমিয়ে আনেন। ফলে ধীরে ধীরে হলুদ রং বের হওয়াও কমে
যায়। শেষের দিন হাতে কোন রকম বাকল ঘষেন না বলেই আর হলুদ রং বের হয় না।
তাই জন্ডিসের
সাধারণ লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে ( যেমন- খাবারে অরুচি, বমিবমি ভাব, পেটে ব্যাথা,
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ
হওয়া, পায়খানার রং কিছুটা সাদা এবং কাঁদার মত হওয়া, জ্বর জ্বর অনুভূতি হওয়া বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, পেটে
পানি জমা ইত্যাদি) কোন অবস্হাতেই কবিরাজের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না। অবশ্যই অনুমোদিত চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় রোগটি মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে।
তথ্য সূত্র-
১। দৈনিক
ইত্তেফাক, ২০
ফেব্রুয়ারি
২০১০।
৩। উইকিপিডিয়া, মুক্ত
বিশ্বকোষ
৪। http://www.online-dhaka.com/80_89_2784_0-jondis-dhaka
html.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন