মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

কুসংস্কার-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ (২৯,ফেব্রু,২০১২)



কুসংস্কার

জন্ডিস কোন রোগ নয়। এটি রোগের একটি লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে মানুষের শরীরে বিলিরুবিন নামের হলুদ এক প্রকার রঞ্জক পদার্থের (Pigment) পরিমাণ বেড়ে যায়। বিলিরুবিনের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ( চোখ, ত্বক, হাত,পা, মুখ ইত্যাদি ) হলুদ হয়ে যায়। যাকে আমরা জন্ডিস বলে থাকি। গ্রাম্য ভাষায় অনেকে কাওলা বলে থাকেন। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে, বংশগত কারণে, ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়, অতিরিক্ত মদ্য পান করলে, পিত্তপাথুরীর জন্য বা টিউমারের কারণে পিত্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে, লিভারে ক্যান্সার ইত্যাদি কারণে জন্ডিস হতে পারে।

দেশের সর্বত্রই শিক্ষিত অশিক্ষিত অনেকের মাঝেই বিভিন্ন কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। জন্ডিস হলে অনেক মানুষ সচেতনতার অভাবে কিংবা অর্থনৈতিক কারণে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে কবিরাজের কাছে যান। কবিরাজেরা এসব মানুষদের বিভিন্ন ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যেমন- ডাব পড়া, লেবু পড়া, বন্য একপ্রকার গাছের মালা, চুনের পানি দিয়ে হাত ধোয়ানো, নিম পাতা বাঁটা এবং চুনের পানি মিশিয়ে রোগিকে গোসল করানো, পেঁপেঁ গাছের শিকড় গলায় বাঁধা ইত্যাদি। তবে এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। চুনের পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা শরীর থেকে বিষ নামানোর কথা বলে কবিরাজেরা কিভাবে মানুষকে ফাঁকি দেন আজ আমরা সে সম্পর্কে জানবো। চাইলেই খুব সহজেই আমরা ব্যাপারটি বাসায় বসে পরীক্ষা করে দেখতে পারি।

কবিরাজেরা যেভাবে আমাদের ফাঁকি দিয়ে থাকেন-
১। কবিরাজেরা প্রতিদিন সকালে শরীর থেকে বিষ নামানোর কথা বলে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগির হাত চুনের পানি দিয়ে ধুয়ে দেন। প্রথম দিন দেখা যায় হাত থেকে গাঢ় হলুদ রঙের পানি বের হচ্ছে। ধীরে ধীরে এ হলুদ রঙের পানি বের হওয়া কমে যায়। সর্বশেষ দিন আর হলুদ রঙের পানি বের হয় না। তখন কবিরাজেরা ঘোষণা দেন রোগি জন্ডিস মুক্ত।
২। আম গাছের বাকলের খুব সামান্য অংশও চুনের পানির সংস্পর্শে আসলে চুনের পানি এবং আম গাছের বাকলের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত হয়। ফলে চুনের পানির রঙ হলুদ হয়ে যায়।
৩। আর লোক ঠকানোর কাজে অবচেতন ভাবে কবিরাজেরা বিজ্ঞানের এই রাসায়নিক বিক্রিয়াটি কাজে লাগান। প্রথমে আম গাছের বাকলের গুঁড়ো প্রয়োজন মাফিক তারা হাতের তালুতে ঘষে নেন। যখন রোগির হাত ধুইয়ে দেন তখন কবিরাজের হাত থেকেই হলুদ রং বের হয় রোগির হাত থেকে নয়। ধীরে ধীরে হাতে আম গাছের বাকল ঘষার পরিমাণ কমিয়ে আনেন। ফলে ধীরে ধীরে হলুদ রং বের হওয়াও কমে যায়। শেষের দিন হাতে কোন রকম বাকল ঘষেন না বলেই আর হলুদ রং বের হয় না।

তাই জন্ডিসের সাধারণ লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে ( যেমন- খাবারে অরুচি, বমিবমি ভাব, পেটে ব্যাথা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হওয়া, পায়খানার রং কিছুটা সাদা এবং কাঁদার মত হওয়া,  জ্বর জ্বর অনুভূতি হওয়া বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, পেটে পানি জমা ইত্যাদি) কোন অবস্হাতেই কবিরাজের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না। অবশ্যই অনুমোদিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় রোগটি মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে  আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে।


তথ্য সূত্র-

১। দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১০

২।http://www.infokosh.bangladesh.gov.bd/detail.php?article_id=562&content_type=0&doc_type=5

৩। উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ

৪। http://www.online-dhaka.com/80_89_2784_0-jondis-dhaka html.





মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

কিছু এলোমেলো কবিতা-৩ (২১,ফেব্রু,২০১২)



১। স্মৃতির পাতায় জমা হয়ে রয় কতনা স্মৃতির রেখা,
   সুখ গুলো সব সপ্ন ছিলো, দুখেরা অশ্রু লেখা।



২। লিখেছি অনেক কবিতা, লিখেছি অনেক ছন্দ,
    জীবন আমার বয়ে চলেছে গতি যে মৃদু মন্দ।

৩। আমারও প্রেমের স্রোতস্বিনীতে বহে যে ফল্গুধারা,
    জীবন আমার বাঁচে কিরূপে? আমি যে সাথী হারা।


৪। ঘুড়ি যেমন সুতোর প্রেমে পড়ে থাকে বাঁধা,
   তেমনি আমি কৃষ্ণ হলাম তুমি আমার রাধা।

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

মর্সিয়া- কবিতা




মর্সিয়া

হারিয়ে সজনী      দুখের রজনী
কেটে যায় নিরজনে,
  তোমার ছোঁয়াতে    অজানা মায়াতে
  জেগে উঠি ক্ষণেক্ষণে।
সজীব সবুজে     হৃদয় অবুঝে
     মিলায়ে প্রাণের সাড়া,
অতীত স্মৃতিতে    তরুর বীথিতে
     ছায়া ফেলে গেলো কারা?

হেঁটে হেঁটে দূরে     হৃদয় অদূরে
কাছাকাছি আরো কাছে,
 শুধুই খেয়ালে     মনের দেয়ালে
মিলিয়ে গিয়েছে পাছে।
                                                             হৃদয়ের ডাক     হৃদয় বিভাগ
                                                                     অবাক এ দুটি দৃষ্টি!
                                                                              তোমার হাসিতে   ভালো কি বাসিতে?
                                                                      আমার নয়নে বৃষ্টি।

নয়নে নয়নে     অগ্নি দহনে
 পুড়েছে আমার প্রাণ,
  একাকী জীবন    ভেঙেছে স্বপন
এ প্রেমের প্রতিদান।


বিদায় বেলাতে    জীবন খেলাতে
       আমার হয়েছে হার,
  অশ্রু ঝরাতে   মাটির ধরাতে
       ফিরে যাব বারে বার।

নব নব বেশে    হৃদয় আবেশে
ত্যাগিয়া মানব রূপ,
                                                      শরতে শশী    একাকী বসি
 হেরিবো শোক স্বরূপ।

কিছু এলোমেলো কবিতা-২

                                                     




১।  ঘাসের শিশিরে রৌদ্র হেসেছে,
    দুজন দুজনায় ভালো কি বেসেছে?



২। স্বপ্নের দেশে, স্বপ্নের প্রাতে, স্বপ্ন করি ফেরি,
   এক টুকরো স্বপ্ন নিতে আর কোরো না দেরি।
   স্বপ্ন আমার, স্বপ্ন তোমার, স্বপ্ন দুচোখ জোড়া,
   স্বপ্ন দেখি দুই ডানাতে পাখির মতো ওড়া।


 

৩। রক্ত রঙের উড়িয়ে ঘুড়ি,
    বন্ধু হবে মেঘ কুমারি। 



৪।  নীল আকাশে নীলচে ঘুড়ি, দেখেছি নয়নে ভুল!
    নীল যে কোথায়? মেঘের দেশে ছড়িয়ে তোমার চুল।



সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বৃষ্টিনন্দ-কবিতা




বৃষ্টিনন্দ

চোখ ফেরানো যায় নারে ভাই, ফেরে নাকো দৃষ্টি,
আকাশ থেকে নেমে এল এক পশলা বৃষ্টি।
সবুজ পাতা বৃষ্টি ভেজা, কাঁপছে থরো থরো,
সবুজ ঘাসের কোমল মায়ায় জল হয়েছে জড়ো।
পড়ছে বারি, তরুর দেহে; জলের ছোঁয়ায় আদর,
তরু-বারির ভালোবাসার, সুতোয় বোনা চাদর।
প্রেমের মায়ায় বিভোর যখন তরু-বারির প্রাণ,
অজানা এক পাখি এসে ছড়িয়ে দিল গান।
গানে গানেই বিহগ যেন ভরিয়ে দিল হাওয়া,
তরুর প্রেমে পাগল বারি, নেই কিছু আর চাওয়া।
দুটি প্রাণের ছোট্ট মনে মিষ্টি মধুর তান,
প্রেম তটিনীর অকূল জলে ছল ছল গান।


মৌ বনে-কবিতা


মৌ বনে



মৌ লতারই বন্ধনে,
কোন অজানা স্পন্দনে,
গিরি কানন নন্দনে,
ভালবাসা লুকিয়ে রাখে
কোন বল্লি বাঁকে?
ঝাউয়ের শাখে শাখে।
সবুজ পাতায় রূপ মাধুরী,
লাল ফুলে তার লজ্জা।
আকাশ পানে বিছিয়ে দিয়ে
লাল সবুজের শয্যা।

দূরাশা-কবিতা



দূরাশা

দীঘল নিশিতে বিধু উঠেছিলে একা,
বাঁশ বনে চুপিসারে হয়েছিল দেখা
নিষুতি নিঝুম রাত সাড়া নেই কোনো,
আমি বলি তুমি শুধু কান পেতে শোনো
ঝিরি ঝিরি মৃদু হাওয়া বন পথে ধায়,
তোমারি জোসনা রাশি আমারে ভাসায়
দল বেঁধে জুনিরা সব মিটমিট জ্বলে,
শীতল আলোতে জুনি কত কথা বলে
আরো আছে নিশি জাগা অজান পাখি,
আঁধারি রূপের খোঁজে মেলে থাকে আঁখি
বনফুল ফোঁটে বনে মাতাল সুবাসে,
বিধু তুমি পাশে নেই দূর আকাশে
মাটির ধরায় আমি ছোট বাঁশ বন,
দিয়েছ শুধুই আলো, দাওনি তো মন

ছেলেটি - ছোট গল্প

ছেলেটি

সাদা তুলোর মতো মেঘ গুলো নীল আকাশের গাঁ বেয়ে কোথায় চলছে ছেলেটি জানে নাওর খুব ইচ্ছে করে মেঘ গুলির পিছু পিছু ছুটে গিয়ে দেখে আসে ওরা কোথায় যায় দল বেঁধে কিন্তু তার কোন উপায় নেই সকাল হতেই ওই গনগনে সূর্যটাই বা হঠা নোংরা দালান গুলির পেছন থেকে কিভাবে উঠে আসে? অনেক চিন্তা করেও ওর ছোট মাথা থেকে এর কোন উত্তর বের করতে পারে নি বড়দের কাছে গেলে কি সব কাঠখোট্টা ব্যাখ্যা দেয় তার মাথা মুন্ডু কিছুই বোঝে না তাই হঠা হঠা মনে হয় ধ্যাত নিজে গিয়ে দেখে আসা যেতো যদি রকম শত শত প্রশ্ন ওর মনের জানালায় অহরহ উঁকি দেয়আর এরকম শত প্রশ্ন নিয়েই ছেলেটি বড় হচ্ছে কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর সব সময় পায় না বড়দের প্রশ্ন করলেই হয় দায়সারা কোন উত্তর দেয় নয়ত বিরক্ত হয়, রাগ করে বলে এত প্রশ্ন কেন বাপু? একটু ভদ্র হবার চেষ্ট কর দেখি

সঙ্গীদের নিয়ে দল বেঁধে সবুজ ঘাসের ওপর পা চালিয়ে, ঘাস মাড়িয়ে দৌড়োনোর ওর কোন সুযোগ নেই জানে না- ঘাস ফড়িং দেখতে কেমন, মাঠের পর পর মাঠ সবুজ কচি ধান ক্ষেতে উথলা দখিনা বাতাস লাগলে কিভাবে সেগুলো দোল খায়, রঙিন প্রজাপতি বুনো ফুলের ওপর বসলে দেখতে কেমন লাগে কিংবা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পাড়ে সবুজ দিগন্ত রেখায় হারিয়ে যাওয়া সূর্য দেখতে কেমন লাগে; আরো কত কি!

ছেলেটি ঢাকা শহর নামে জেল খানার কোন এক বন্দী কুঠুরিতে থাকেসকাল হতেই স্কুলের গাড়ি আসে নেবার জন্য হুড়োহুড়ি করে কোন মতে গাড়িতে বন্দী হয়ে ধুলো-ধোঁয়া, ডাস্টবিন, দোকান পাট আর জীর্ণ এই শহর দেখতে দেখতে স্কুলে পৌঁছে যায় এবার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, সবে সাত শেষ হল পড়াশুনায় খুব মনযোগি বলে ওর বাবা-মা খুব খুশী স্কুল ছাড়া বাকি সময় ওকে ঘরেই বন্দী থাকতে হয় বাবা-মা মাঝে মাঝে এদিক ওদিক বেড়াতে নিয়ে যায়, দামী খাবার খাওয়ায়, উপহার কিনে দেয় তবুও কি যেন নেই, কি যেন নেই মনে হয় ছেলেটির ছেলেটিও জানে না, বাবা-মাও বোঝে না বাবা-মা মনে করে ওর কিসের অভাব, খাবে দাবে আর পড়াশোনা করবে ব্যাসদিনের বেশির ভাগ সময়ই ওকে বাসার কাজের মহিলাটির সাথে কাটাতে হয় বাবা-মা দুজনই চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকে ছেলেটিকে দেবার মত তাদের সময় কম

শাওন মাসের এক বৃষ্টি ভেজা দিন বাবা-মাকে অনেক বলে-কয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখল।বারান্দায় দাঁড়িয়ে হঠাওর আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ গুলোকে ধরতে ইচ্ছে করল, হাত বাড়িয়ে ধরতে পারল না তাই খুঁজে পেতে কোথা থেকে এ্যালুমিনিমের একটা রড নিয়ে এসে বারান্দার শিক গলিয়ে আকাশ পানে তুলে ধরল কালো মেঘ গুলো ধরার জন্য রডটি তুলে ধরতেই মেঘগুলো যেন সভয়ে আরো ওপরে উঠে গেল আর ছেলেটির বের করে দেয়া রডটি মেঘের কাছে না পৌঁছে গিয়ে পড়ল খোলা বিদ্যুতের লাইনের ওপরবিদ্যু পৃষ্ঠ হয়ে ছেলেটি ওভাবেই আকাশের দিকে চেয়ে রইল কাজের মহিলা ডাকতে এসে কোন সাড়া না পেয়ে গায়ে হাত দিতেই বিদ্যু পৃষ্ঠ হয়ে দুজনেই মারা পড়ল।................

অনেক বছর কেটে গেল, ওই সন্তান হারা দম্পতির অনেক বয়সও হল কিন্তু তাদের ছোট্ট অবুঝ ছেলেটির কথা এখনও ভুলতে পারে নি ভুলতে পারে নি ওর কোমল চাহনি,নরম তুলতুলে গাল, এলোমেলো চুল, ছোট ছোট হাত পা, দুষ্টুমি মাখা হাসি আর বোকার মত প্রশ্ন গুলো বাবা এখনও নিজের আজান্তে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মা ঘুমের ঘোরে সন্তানের নাম ধরে আর্তনাদ করে ওঠে আর জেগে থাকলে ভাবে আমরা কি সবাই চাইলে পারতাম না শিশুদের জন্য আরো সুন্দর একটি সমাজ উপহার দিতে যেখানে শিশুরা থাকবে আরো নিরাপদ, আরো উচ্ছ্বল