রবিবার, ৬ জুলাই, ২০১৪

দশ হাজার ক্লিক


দশ হাজার ক্লিক



সবাইকে শুভেচ্ছা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন। শ্রী বঙ্কু বিহারী সাহিত্য ও ভাবনার সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদের আন্তরিক সহৃদয়তাই আমার চলার অনুপ্রেরণা। আপনাদের পঠন-পাঠনই আজ এই ব্লগকে  ১০০০০ ( দশ হাজার) ক্লিকের সংখ্যাটি স্পর্শ করতে সক্ষম করেছে। এই জন্য সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আশা করব সব সময় সাথে থাকবেন, অনুপ্রানিত করবেন। পরবর্তিতে আরো ভালো লেখা দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের কাছে নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করি। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
                                                                                               ধন্যবাদ

মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০১৪

মৃত্যু নিশি (ছোট গল্প-০১.০৭.২০১৪ইং)






মৃত্যু নিশি 



রুমটি বদ্ধ আর অন্ধকার। ভ্যাপসা একটা গরম। একফোঁটা আলো বাতাস কিছুই নেই। গরমে গা দরদর করে ঘামছে। আতঙ্ক আর গরমে শার্ট ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে রুবেলের। বাব-মা নাম রেখেছিলো মো: রুবেল হোসেন। এলাকায় ফইরা রুবেল নামে পরিচিত। বাবা ছিল মলম বিক্রেতা। মা বাসা বাড়িতে ছুটা কাজ করত।  মিরপুরের শিয়ালবাড়ি বস্তিতে জন্ম। প্রত্যেকদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ওর বাবা ওকে কাগজ টোকাতে পাঠতো। অভুক্ত পেটে চোখ ডলতে ডলতে উস্কোখুস্কো চুল, নোংরা ছেঁড়া গেঞ্জি-লুঙ্গি পরা অবস্থাতেই বের হয়ে যেত বস্তা নিয়ে। কোথায় খাবে সকালের খাবার ঠিক জানা নেই। আদৌ খাওয়া জুটবে কিনা তাও জানে না। বাসায় ওর বাবাকে প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ৩০ টাকা দিতে হয় কাগজ বিক্রি করে। না হলে বাসার ভাত বন্ধ। প্রচুর মারধরও করে ওর বাবা ওকে। যেদিন টাকা বেশি রোজগার করতে পারত না সেদিন ভয়ে বাসায় আসতো না। চেয়ে চিন্তে কিছু খেয়ে নিযে ফুটপাতে, রাস্তার ডিভাইডারের ওপর কিংবা ওভার ব্রিজের ওপর ঘুমিয়ে থাকতো। ভোরে উঠে উঠে পথে পলিথিন, বোতল, রিক্সার স্পোক, কাগজ, লোহা-লক্কর এই সব হাবি জাবি খুঁজতে হয়।  রুবেলের বন্ধুরাও এই কাজে যায়। সবাই আলাদা আলাদা টোকায় সবাই। কখোনো কখোনো পাল্লা দিয়ে দুই তিনজন এক সাথে টোকায়। সবার একটা সাধারণ দুশমন ছিলো সেটা হলো সব পাড়ার কুকুর গুলো। কোনো এলাকার কুকুরই ওদের দেখতে পারতো না। দেখলেই দাবার দিত। আবার লোকজনদের হাতে প্রত্যেক দিনই মারধোর খেত, গালমন্দ শুনত। একদিন এক বাড়িতে ভেতরে ঢুকতেই কোত্থেকে এক লোক হঠাৎ এসে ওর হাত শক্ত করে ধরে বললো - ''পাইছি তোমারে চান্দু। ওই কুত্তার ছাও কাইল এইহান থিকা পানির পাইপগুলা চুরি কইরা কই বেচছস্ ক?'' বলতে বলতেই হাতে লম্বা একটা কাঠের তক্তা এগিয়ে দেয় কে যেন। চ্যাপ্টা তক্তা দিয়ে মারতে লাগলো আর বলতে লাগলো- জানতাম তুই লোভে পইরা আইজও আসবি। কই বিক্রি করছস পাইপ গুলা ক? হারামাজাদা বল?’’  রুবেল চিৎকার করে বলেছিল- ''ছার আমি নেই নাই ছার। আমি বেচিনাই ছার। আল্লার কসম ছার আমি চুরি করি না। আইজই প্রথম আপানেগো বাসায় আইছিলাম শিশি বোতল টোকাইতে।'' সারা শরীর চওড়া চওড়া দাগে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। একবার এক হোটেলের সামনে খাবারের জন্য ঘুরঘুর করছিলো। এই দেখে মালিক ওর দিকে গরম চা মেরেছিল। মাথার কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছিলো সেবার।  মাথার সেই অংশে এখনও চুল ওঠেনা। আরেকদিন ওর চেয়ে বয়সে বড় এক টোকাই বস্তা সহ ওর মালপত্র কেড়ে রেখে দেয়। সেই নিয়ে ওর সাথে মারমারি লাগে। মারের বেশির ভাগটি ওর ভাগেই জুটেছিলো। এরকম মারধোর ওর কপালে কত জুটেছিলো তার হিসেব নেই।

হঠাত অন্ধকার ঘরটাতে আলো জ্বলে উঠল। সিলিং অনেক ওপরে। মৃদু একটা আলো। সবকিছু আবছা দেখা যাচ্ছে। সাত দিন কেটে গেছে ওকে এখানে আনার পর। আলো জ্বলার সাথে সাথে ভয়ে ওর বুকটা ধক্ করে উঠলো। আবার একপ্রস্থ মারপিট হয়ে যাবে হয়তো ওর ওপরে।  ঘরের পশ্চিম কোণে একটা মজবুত লোহার গেট। আরেক কোণায় একটা টেবিল। দুটি চেয়ার রাখা টেবিলটার এপার ওপার। চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা রুবেলের। গত সাত দিনে জল আর খাবার বলতে খুব কমই জুটেছে। ঘরের দক্ষিণ দিকে একটা পানির চৌবাচ্চা রাখা আছে। কতবার যে ওকে সেটার ভেতর ঠেসে ধরা হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। আঙুলের ডগায় সুই ফোঁটানো, মোটা রোলার দিয়ে পেটানো, গরম পানির বোতল দিয়ে পায়ের তলায় পেটানো, ঘুষি-লাথি, উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা, নখ উপড়ে ফেলা, হাত পা ব্লেড দিয়ে কেটে লবণ লাগিয়ে দেয়া আরো কত কি? প্রথম প্রথম রুবেল শক্ত থাকার চেষ্টা করলেও এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে আর সব বলেও দিয়েছে যা জানে। ওরা আরো জানতে চায়। তাই দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে। পশ্চিম দিকের দরজাটা খুলে গেলো।র‌্যাবের পোষাক পরা জনা পাঁচেক লোক ঢুকলো। টেবিলের উল্টোদিকে মুখোমুখি চেয়ারে এক নতুন অফিসার বসলো। এ কদিনে এ অফিসারকে রুবেল কখনো দেখ নি। অফিসারটি বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো- কি রুবেল সাহেব? কি খবর? এখন শরীরটা কেমন বোধ করছেন?’’

ছার পানি খামু একটু পানি খাওয়ান। মৃদু শুকনো কন্ঠে কথাটা বলেই একবার ঢোক গেলার মতো করলো রুবেল। 

অফিসারটি ইশারা করতেই এক জওয়ান পানি আনতে চলে গেলো।

আর কিছু খাবেন রুবেল সাহেব? র‌্যাব অফিসারটি প্রশ্ন করল।


ছার গরম শিঙ্গারা খাইতে মন চায়। লগে এককাপ দুধ চা। 

র‌্যাব অফিসার ইশারা করতেই ঘরের এককোণায় গিয়ে ওদের মধ্যে একজন মোবাইলে গরম শিঙ্গারা আর চায়ের কথা বলে দিলো। 

রুবেল সাহেব আপনি তো লোকটা খুব কাজের। র‌্যাবের অফিসারটি এক নিঃশ্বাসে বলে যেতে লাগলো। এত কিছু পেটে নিয়ে ঘুরেন আগে বললেই তো গত সাতদিনের মারধোর গুলো করা লাগতো না। আপনি যে তথ্য গুলো দিয়েছেন সব যাচাই বাছাই করেছি আমরা। সবই সত্যি। এর মধ্যে আপনার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিন হাজার বোতল ফেনসিডিল, পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র সহ খিলগাঁও থেকে মামুন নামে একজন, বাসাবো থেকে পিয়া নামে এক ইয়াবা সম্রাজ্ঞীকে পঞ্চাশ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়া কুমিল্লা শহর থেকে আলম, রেজাউল, মুক্তাদির নামে অস্ত্রসহ তিন তালিকা ভুক্ত সন্ত্রাস গ্রেপ্তার করেছি। সবই তো ঠিক আছে কিন্তু আপনি এক সাংসদ তার এলাকার এক কমিশনারকে খুন করিয়েছে এই তথ্য তো আমরা মানতে পারছি না। 

ছার এই রুবেল মিথ্যা কয় না। খারাপ কাজ করতে পারি কিন্তু আমি যে প্রমাণ গুলার কথা কইলাম আপনেরা মিলাইয়া দেখেন প্রমাণ পাইবেন। কমিশনার মোছাদ্দেক ভাইরে এম.পি. মুন্না খুন করাইছে। 

কেন খুন করাইছে ? অফিসারটি জিজ্ঞেস করলো।

এলাকায় চান্দাবাজির টাকা নিয়া গন্ডোগোলের শুরু। তাছাড়া আগামীবার এম.পি. মুন্না ভাইয়ের বদলে মোছাদ্দেক ভাইয়ের আওয়ামীলীগের টিকেট পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হইছিলো। দিন দিন মোছাদ্দেক ভাইয়ের শক্তি বাড়তাছিলো। এলাকার রাস্তা ঘাটের কাজ-কাম, প্লট দখল, বস্তি দখল নিয়া দুইজনের মধ্যে বনিবনা হইতাছিলো না।

বাহ্ সবই জানেন দেখছি। শোনেন এইবার সত্যি কথা বলি। এম.পি. সাহেব আসছিলো ক্যাম্পে। এসে আমার সাথে কোটি টাকার চুক্তি করে গেছেন যাতে তাকে মোছাদ্দেক খুনে না ফাঁসানো হয়। আপনার গ্রেপ্তারের কথা শুনেই এসেছিলো। বুঝেতেই পারছেন আপনার ওপর নাখোশ তিনি। উনার ডান হাত ছিলেন আপনি এক সময়। পরে মোছাদ্দেকের হয়ে কাজ করা আপনার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত হয় নাই। 

এরই মধ্যে চা, শিঙ্গারা, পানি চলে এলো। হাত পা খুলে দেয়া হলো অফিসারের ইশারায়। রুবেল খুব মনোযোগ দিয়ে চুপচাপ শিঙ্গারা-চা খেতে লাগলো।

আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে? করলে বলেন আমি আপনার জন্য আনিয়ে দেবো। 

রুবেলের চুপচাপ থাকা দেখে অফিসারটি এবার ভরসা দেয়া কন্ঠে বললো- আপনি বলেন যা খেতে চান বলেন। সাতদিন এতো মারধোর করলো আপনাকে এটা ঠিক হয় নাই। আমি থাকলে মারতে দিতাম না। বলেন কি খাবেন?

ছার তেহারি খাইতে ইচ্ছা করে খুব। বলেই রুবেল চুপ হয়ে গেলো। এই সাত দিন যেন তার কাছে সাত বছরের মতো মনে হয়েছে। মনে হয় কত বছর খোলা হাওয়া খায় না। লাল্টুর দোকানের চা, কলিমের শিঙ্গারা, ডায়না হোটেলের তেহারি খায় না।

খাওয়া দাওয়া হতেই হাত পা বেঁধে অন্ধকার ঘরে রেখে চলে যায়। ছোটো বেলার কত কথা মনে হতে লাগলো তার হিসাব নেই।টোকাই থেকে টেম্পোর হেলপার হওয়া, তারপর নেশা করা, খারাপ বন্ধুদের সাথে মেশা, সন্ত্রাসী লাইনে যোগ দেয়া, প্রথম খুনের দিন, প্রেমে পরার পরে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে যাবার প্রথম দিন। আরো কত কি।
টেম্পোতে যখন হেল্পারি করতো তখন চলন্ত টেম্পোতে উঠতে গিয়ে পা ভেঙে যায়। দেড় মাস বিছানায় পড়েছিলো। তখন ওর বাবার অকথ্য গালগালি শুনতে হতো প্রতিদিন হারামজাদা মরলেও তো পারতি।তোরে কে এমন বসাইয়াই বসাইয়া ভাত খাওয়াইবো। পঙ্গু সাইজা আছো? আইজই কামে যাবি কুত্তার বাচ্চা। ঘরে তোর খানা নাই আইজ থিকা। ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই যে পরের দিন ঘর থেকে রাগ করে রুবেল বের হলো আর কোনো দিন সে ঘরে ঢোকে নাই। মাঝে মাঝে মায়ের সাথে দেখা করতে যেতো। মাকে এটা ওটা কিনে দিতো। মাসে মাসে হাত খরচ দিতো। বাবার সাথে কোনোদিন কথা বলতো না। একদিন রোড এক্সিডেন্টে বাবা মারা গেলো। মাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে রাখলো। ছেলে কোথায় যায় কি করে মা ঠিকমতো জানতে বুঝতে পারতো না। প্রশ্ন করলেও উত্তর পেতো না। রুবেলের বয়স তখন একুশ। এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে সবে নাম করতে শুরু করেছে। দলে মিটিং-মিছিলের আগে, কোন মারামারিতে আগে, কোপাকুপিতে রামদা হাতে সবার আগে। এম. পি. সাহেবের মনও জয় করে নিয়েছিলো। যে কোনো কাজে রুবেল সবার আগে। জীবনের প্রথম খুন এম.পি. সাহেবের জন্যই। এক ব্যবসায়ীকে খুন করে। এম.পি. মুন্না ভাই ব্যবসায়ীকে পাঁচ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দিয়েছিলো পঞ্চাশ লাখ টাকা দেবার প্রতিশ্রুতিতে কিন্তু ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে ঘুরাচ্ছিল। তাই হাতে একটা সদ্য আমদানি করা নাইন এম.এম. দিয়ে বললো যা ফুটা কইরা দে। ব্যাকআপ আমি দিমু। সেই শুরু। এ পর্যন্ত সাতটি খুন সহ আঠারোটি মামলার আসামি এই ফইরা রুবেল।
গার্মেন্টেসের এক মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করে ফেলে। দু বছর পরেই ঘরে এক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। সুখেই কাটল তার পরের দুই বছর। কিন্তু র‌্যাব হঠাৎই সব এলোমেলো করে দিলো।
এরই মধ্যে একবার এসে কয়েকজন ওকে ডায়না হেটেলের তেহারি খাইয়ে চলে গেলো। ওদেরকে প্রশ্ন করেও উত্তর পেলো না- কবে ওকে কোর্টে চালান করা হবে।



রাত একটার দিকে হঠাৎ দরজা খুলে গেলো। আট দশজন র‌্যাব এসে রুবেলর হাত পা-এর বাঁধন খুলে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে র‌্যাবের এক গাড়িতে তুলল। রুবেল সবাইকে বার বার জিজ্ঞেস করলো- স্যার আমারে কই লইয়া যাইতাছেন? ছার আমারে মাইরালাইবেন? সার আমারে ক্রসে দিবেন?

একজন বলে ওঠে চোপ হারামজাদা আর একটা কথা বললে তোর মাথার খুপরি উড়িয়ে দেবো।

রুবেল ভয়ে-আতঙ্কে কাঠ হয়ে থাকে। ওকে এয়ার পোর্টের পেছনে এক নিড়িবিলি যায়গায় নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ডান পায়ের হাঁটুতে তারপর বামপায়ের উরুতে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। মাটিতে পড়ে যায়-''রুবেল। প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়। যন্ত্রণাকাতর কন্ঠে হাউমাউ করে রুবেল বলে ওঠে ছার আমারে মাইরেন না। আমারে ডাক্তারের কাছে নিয়া চলেন।ছার আমার একটা তিন বছরের মাইয়্যা আছে। বাসায় বউ আছে। আমারে মাইরেন না।''

র‌্যাবের একজন ভারী বুট পায়ে রুবেলের মুখে-বুকে-পেটে লাথি মারতে মারতে বলতে থাকে কুত্তার বাচ্চারা যখন মানুষ খুন করোস তথন মনে থাকে না। তোদের জন্য দেশে এত বিশৃ্ঙ্খলা। তোরা দেশটারে সুন্দর হইতে দিলি না। তোদের একটাকেও দুনিয়াতে রাখবো না। শুয়োরের বাচ্চা চাঁদাবাজি করোস, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ করোস বলেই মাথার খুলিতে আর বুকের বাম পাশে ঠেকিয়ে পরপর দুটি গুলি করে দিলো। 
লাশ নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিকে রাখলো। 

পরদিন কিছু কিছু টিভি চ্যানেলে বরাবরের মতো ছোট একটা সংবাদ পরিবেশিত হলো  লাশের ফুটেজ আর জীবীত অবস্থায় তোলা ছোট্ট একটা ফাইলফটো। আর সেই একই বিবরণ- ''এদিকে বন্দুক যুদ্ধে মিরপুরের আলুব্দী গ্রামে ফইরা রুবেল নামে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর মৃত্যুর কথা নিশ্চত করেছে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসী ফইরা রুবেলের দেয়া তথ্য মতে তার সহযোগীদের ধরতে আলুব্দি গ্রামে অভিযান চালাতে যায় র‌্যাবের একটি বাহিনী। সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির সময় ফইরা রুবেল পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। পরে সেখান থেকে পায়ে, মাথায় এবং বুকে গুলি বিদ্ধ অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব। এছাড়া সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া দুটি চাইনিজ পিস্তল, আট দশ রাউন্ড গুলি এবং কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করে  র‌্যাব।''

বুধবার, ১৮ জুন, ২০১৪

বিমূর্ত-৩ (কবিতা-১৯.০৬.২০১৪)


 
বিমূর্ত-৩

 ফুলকে প্রজাপতি ভেবেছি,আকাশ কে সমুদ্র ভেবেছি,
 তোমাকে অপ্সরা ভেবেছি।
 কিন্তু নিজেকে চেনা হয় না কখোনো।
এই জন্যই সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়।
 সব কিছুই শুভ-শুভা দেখে হতো তবে সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র সেই দিন গুলোই বানাতেন
 আর বলতেন বনেদি সবই।


রঙের খেলা, সুরের ভিড়ে, তোমায় ঘিরে,
 বিকেল বেলা, কনক মোড়া, কাকন জোড়া।
 উম্....................... কি হবে তারপর।
 যা বাবা ছন্দ ভুলে গেছি।
 তাহলে কবি হবো কিভাবে?
না কবি হবো না; রঙ- তুলি- ইজেল- ক্যানভাস আর মনের বিশাল কল্পলোক।
একপোচ লাল দিয়ে তারপর এক পোচ নীলের ছোঁয়া,
তারপর একে এক সবুজ, হলুদ, আকাশি, গোলাপি..................................
তোমার অপূর্ব এক মূর্তি ফুটে উঠলো কিন্তু তোমায় পাওয়া হলো না।
না এসব দিয়ে তোমাকে পাওয়া হবে না।
সুর দিয়ে চেষ্টা করে দেখি।
কন্ঠ মেলে ধরলাম আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে
কিন্তু হঠাৎ মনে হলো গান বড়ো দুর্বল মাধ্যম শব্দ স্বর্গ পর্যন্ত পৈৗঁছুতে সময় লাগবে অনেক বছর।
একে এক সব লালত্যি দিয়ে তোমায় চাইলাম।
 নৃত্য বড়ো অস্থির, ভাস্কর্য কথা বলে না,
নন্দনতত্ত্ব অবাস্তব, অভিনয় মিথ্যে, আবৃত্তি আবেগময়।
তোমর জন্য কিছুই নেই।
দিন যায় রাত যায়। রাত আসে দিন আসে।
কিন্তু হায় অপ্সরা কোথায় এযে মানসী; কখনো বা রক্ত মাংসে গড়া মানবী।
তোমার জন্য হৃদয় বিলিয়ে দিলাম স্বর্গে, মর্তে, ভূলোকে, দ্যুলোকে, পবনে, পাতালে।
এবার দেখি সত্যিই তুমি আমার।
তুমি আমাকে ভালোবাসো যেমনি আমিও তোময় ভালোবাসি।

মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০১৪

হাল ফ্যাশন এবং প্রেমের বাতিক- ছড়া ( ০৬.০৫.২০১৪)





হাল ফ্যাশন এবং প্রেমের বাতিক


কোথায় যাবো কি যে করি কেমন করে কি যে
বুঝতে বাছা এমন ফাঁদে পরতে যদি নিজে।
লম্ফ ঝম্ফ সঙসাজা আর পোষাক পরিপাটি
এসব ছাড়া জীবন হতো গোবর গোলা মাটি।
নিকুচি ওই নীতি বিদ্যার গবেট গরু ছাগল
সন্ধ্যা রাতেও চোখ ঢাকতো কালো রঙের গগল।
বিদেশ হতে আমদানী ভাব, নামদানী সব ঢং
সার্কাসে সব খেদিয়ে দেয়া চোগা পরা সঙ।
শার্ট গুঁজে দাও পেটের ভেতর পাজামাটার নিচে
তারপরে প্যান্ট বাঁধতে হবে কোমরবন্ধ খিচেঁ।
পায়ে মোজা পা ঢাকা সু চকচকে রঙ করা
হাঁটতে হবে খটাশ খটাশ কাঁপিয়ে দিয়ে ধরা।
চুলে মেরে থকথকে অপঃ কি যেন ছাই নামটা
ওরে মলেম জেল বলে সব দেখতো কত দামটা!
হাত তুলে তার বগল গলে ঘ্রাণের বাষ্প মারে
বোটকা পাঁঠার এমন সুবাস কেমনে বুঝাই কারে।
ব্যাটা মানুষ কিসব মাখে মুখে ঘষে ঘষে
গলায় দড়ি বাঁধতে হবে এসব হবার শেষে।
হয়ত ছাগল নয়ত পাঁঠা নাকি কালো খাসি
আঠা দিয়ে সেঁটিয়ে দিল ছ্যাবলা মারা হাসি।
হাসি তো নয় ছাগল ডাকা মুখের মতো ভাব
সে হলো সব লোকের সেরা সকল জনের বাপ।
এরেই নাকি ফ্যাশন বলে এটাই যুগের হাওয়া
চপ কাঠিতে একটা একটা ভাতের দানা খাওয়া।
শর্মা গিরিল জানলা ভাজা কাবাব বিরয়ানী
মোরগ পোলাও কাচ্চি টিকা দইয়ের বোরহানি।
পাইপ দিয়ে খায় ঠাণ্ডা কফি কে কবে হায় জানতো
কোমল পানির এমন মজা বোতল ভরে আনতো।
এতো গেলো খাবার বাতিক আরো বাতিক আছে
প্রেমের বাতিক পয়লা বাতিক জন্মে যেন চাষে।
ধান যেমনটা বিঘে প্রতি বিশ কুড়ি মণ হয়
তেমনি ধারা জন প্রতিতে কুড়ির নিচে নয়।
সকাল দুপুর সন্ধ্যে বেলা ডেটিং বোধহয় বলে
৭দিনে তার ২১দফা দাবি আদায় চলে।
উদ্যানে আর পার্কে পার্কে দফায় দফায় দাবি
তালা মেরে ছেড়ে দিলেও ফ্যাশনটা হয় চাবি।
লাইলিরে সে কথা দিয়ে ভুল করে খায় মিষ্টি
সিডিউল তার আউলে উঠে কি যে অনাসৃষ্টি।
ট্রেনের মত ফেঁসে যায় ডেটিং ক্রমধারায়
টুনটুনি বা ময়না টিয়া বাসার নিচে দাঁড়ায়।
চেঁচিয়ে বলে হারামজাদা আমায় নিয়ে মজা
জুতো পেটা করবো তোকে হয়ে যাবি সোজা।
বুলবুলি আর কাজলি পাখি সাধের কবুতর
একসাথে সেই বাসার নিচে ছেলের আছে জ্বর।
এ বলে ও আমার প্রেমিক ও বলে ওর জান
টুনটুনি তাই শুনে বলে বুক করে আনচান।
চুলোচুলি শুরু করে কাগে-বগে যুদ্ধ
নায়ক এখন পালিয়ে বেড়ায় জনাব সাধু শুদ্ধ।
তবুো নায়ক প্রেম ছাড়ে না চলতে থাকে তালে
মাঝে মাঝে জুতোও খায় পালিশ করা গালে।
মানির মান পাহাড় সম যায়না জুতো পেটায়
ছাগল যেমন বাঁধা থাকে লম্বা দড়ির খোঁটায়।
নায়ক বাবু কেমনে তাহার প্রেম ছাড়িতে পারে
ভাবুন পাঠক প্রেমের বাতিক কেমনে তারে ছাড়ে।

গোঁফ বিসর্জন- ছড়া (০৬.০৫.২০১৪)





গোঁফ বিসর্জন


গোঁফের বাড়ি গোফেঁর ঘর গোঁফের সংসার
গোঁফের ওপর এমন খড়গ এমন অনাচার।
এমনে শখের গোঁফ জোড়া হায় হলো বলিদান
দুঃখ ক্ষোভ আর বিষাদ ভরা একটু অভিমান।
রবি বাবু দ্বিতীয় সীতা করল বিসর্জন
তেমনি কবি অরূপ করে গোঁফ জোড়া বর্জন।
চার্লি সাহেব, হিটলারী আর স্তালিনের গোঁফ
গোঁফ কি রাখেন ভ্যাটিকেনের শ্রদ্ধাভাজন পোপ!
মার্কটোয়েন আর হোচিমিনের গোঁফটা এমন শখের
গোঁফ চাঁচা তাই সত্যি কথা বড্ড বেশি দুখের।
রবি বাবুর গোঁফের তোড়ে মুখটা ছিল ঢাকা
চেঙিসেরো গোঁফ ছিল ভাই ঠোঁটের ওপর বাঁকা।
ফরাসীরা গোঁফ রাখে সব জাঁদরেলি কয় তারে
কেমনে বুঝাই গোঁফ ছাড়া কেউ মহাপুরুষ নারে।
গুপ্ত কবির গোঁফটা ছিল কেমন তুলোর মতন
সকাল বিকাল করত পালিশ করত কত যতন।
লুথার কিংয়ের সরু গোঁফ আর কুবলা খানের চারটা
এডিসনের গোঁফ দিয়ে হয় বিজলি বাতির তারটা।
এতো গেলো মানুষ গুফো এবার বলি প্রাণি
গোঁফ ছাড়া কি বিড়াল হবে দেখাও দেখি আনি।
টেংরা, বোয়াল, পাংগাশ আর লম্বা গুঁফো শিঙ্গী
বাঘ, ভোদর আর বনের রাজা গুম্ফোধারী সিংগী।
হাতির এমন বাতিক হলো রাখতে হবে মোচ
হাতি কোথায় গজধারী সিল ব্যাপারটা ভাই সোচ।
তাইতে বলি যা করো ভাই গোঁফ চাঁচা ঠিক নয়
গোঁফ না হলে খুব সহজে বিখ্যাত কেউ হয়।