রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১২

নজরুলের চিঠি ( ১০.১২.১২)



ফজিলাতুন্নেসাকে না পাওয়ার ব্যাথায়, “বেদনা ভেজা বহিঃপ্রকাশ”
কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লিখা কবি নজরুলের একটি চিঠি। 

১৫ জুলিয়াটোলাস্ট্রীট, কলিকাত
০৮.০৩.২৮, সন্ধ্যা

প্রিয় মতিহার,
পড়শু বিকালে এসেছি কলকাতা। উপরের ঠিকানায় আছি। ওর আগেই আসবার কথা ছিল। অসুখ বেড়ে ওঠায় আসতে পারি নি। দু চার দিন এখানেই আছি। মনটা কেবলই পালাই পালাই করছে। কেথায় যাই ঠিক করতে পারছি নে। হঠাৎ কোনো দিন একযায়গায় চলে যাব; অবশ্য দু দশ দিনের জন্য। যেখানেই যাই আর কেউ না পাক তুমি খবর পাবে। বন্ধু তুমি আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যে দিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে সেদিন অন্তত তোমার বুক বিঁধে উঠবে। তোমার ওই ছোট্ট ঘরটিতে শুয়ে; যে ঘরে তুমি আমায় প্রিয়ার মত জড়িয়ে শুয়ে ছিলে। অন্তত এইটুকু সান্ত্বনা তো নিতে পারব। এই কি কম সৌভাগ্য আমার। কেন এ কথা বলছি শুনবে? বন্ধু আমি পেয়েছি; যার সাক্ষাত আমি নিজেই করতে পারব না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা।  এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে। প্রিয় হয়ে ওঠেনি কেউ। আমার জীবনের সবচেয়ে করুণ পাতাটির লেখা তোমার কাছে লিখে গেলাম। আকাশের সবচেয়ে দূরের তারটির দীপ্তি চোখের জলকণার মত ঝিলমিল কারবে মনেকোরো সেই তারাটি আমি। আমার নামেইতার নামকরণ কোরো কেমন? মৃত্যু এত করে মনে করছি কেন জান?  ওকে আমার সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে বলে। মনে হচ্ছে জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে মরলে সে আমায় বরণ করে নেবে। সমস্ত বুকটা ব্যাথায় দিন রাত টনটন করছে। মনে হচ্ছে সমস্ত বুকটা যেন ওই খানে এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। ওর যদি মুক্তি হয় বেঁচে যাব। কিন্তু কি হবে কে জানে? তোমার চিঠি পেয়ে অবিধি কেবল ভাবছি আর ভাবছি। কত কথা আর কত কি তার কি কুল কিনার আছে? ভাবছি আমার ব্যাথার রক্তকে রঙিন খেলা বলে উপহাস যে করে নি তিনি হয়ত দেবতা, আমার ব্যাথার অশ্রুর বহু উর্ধ্বে; কিন্তু আমি মাটির নজরুল বলেও সে দেবতার কাছে অশ্রুর অঞ্জলি আর নিয়ে যাবো না। ফুল ধুলায় ঝরে পরে, পায়ে পিষ্ট হয় তাই বলে কি ফুল এত অনাদরের? ভুল করে সে ফুল যদি কারোর কবরিতেই খসে পরে এবং তিনি যদি সেটাকে উপদ্রপ বলে মনে করেন তাহলে ফুলের পক্ষে প্রায়াশ্চিত্ত হচ্ছে এক্ষুনি কারোর পায়ের তলায় পরে আত্মহত্যা করা। সুন্দরের অবতেলা আমি সইতে পরিনা বন্ধু, তাই এত জ্বালা। ভিক্ষা কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে অদৃষ্টের বিড়ম্বনায় তাহলে তাকে ভিক্ষা নাই দাও কুকুর লেলিয়ে দিও না। আঘাত করবার একটা সীমা আছে সেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে আসে, আর তক্ষুণি তার নাম হয় অবমাননা। ছেলে বেলা থেকে পথে পথে মানুষ আমি। যে স্নেহে, যে প্রেমে বুক ভরে ওঠে কানায় কানায় তা কখোনে কোথাও পাই নি।
এবার চিঠির উত্তর দিতে বড্ড দেরি হয়ে গেল। নাজানি কত উদ্বিগ্ন হয়েছো। কি করি বন্ধু শরীরটা এত বেশি বেয়াড়া আর হয়নি কখোনো। ওষুধ খেতে প্রবৃত্তি হয় না। আমায় সবচেয়ে অবাক করে নিষুতি রাতের তারা। তুমি হয়ত অবাক হবে আমি আকাশের প্রায় সব তারা গুলোকে চিনি। তাদের সত্যিকারের নাম জানি নে কিন্তু তাদের প্রত্যেকের নাম করণ করেছি আমার ইচ্ছে মত। সেই কত রকম মিষ্টি মিষ্টি নাম। শুনলে তুমি হাসবে। কোন তারা কোন ঋতুতে কোন দিকে উদয় হয় সব বলে দিতে পারি। জেলের ভিতর যখন সলিটারি সেলে বন্ধ ছিলাম তখন গরমে ঘুম হতো না। সরারাত জেগে কেবল তারার উদয় অস্ত দেখতাম। তাদের গতি পথে আমার চোখের জল বুলিয়ে দিয়ে বলতাম বন্ধু ওগো আমার নাম না জানা বন্ধু আমার এই চোখের জলের পিচ্ছিল পথটি ধরে তুমি চলে যাও অস্তপারের পানে আমি শুধু চুপটি করে দেখি। হাতে থাকত হাত কড়া, দেয়ারের সঙ্গে বাঁধাচোখের জলের রেখা আঁকাই থাকত মুখে বুকে। আচ্ছা বন্ধু কফোঁটা রক্তদিয়ে এক ফোঁটা চোখের জল হয় তোমাদের বিজ্ঞানে বলতে পারে? এখন কেবলই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে যার উত্তর নেই মিমাংসা নেই সেই সব জিজ্ঞাসা। যেদিন আমি ওই দূরের তারার দেশে চলে যাব সেদিন তাকে বলো চিঠির একে যেন দু ফোঁটা অশ্রুর দর্পন দেয় শুধু আমার নামে। হয়ত আমি সেদিন খুশিতে উল্কা ফুল হয়ে তার নোটন খোঁপায় ঝরে পরব। তাকে বোলো বন্ধু তার কাছে আমার চাওয়ার কিছুই নেই। আমি পেয়েছি তাকে পেয়েছি। আমার বুকের রক্তে চোখের জলে আমি তার উদ্দেশ্যে আমার শান্ত সিগ্ধ অন্তরের পরিপূর্ণ চিত্তের একটি সশ্রদ্ধ নমস্কারে রেখে গেলাম। আমি যেন শুনতে পাই সে আমারে সর্বান্ত করণে ক্ষমা করেছে। ফুলের কাঁটা ভুলে গিয়ে তার উর্ধ্বে ফুলের কথাই যেন সে মনে রাখে।
ঘুমিয়ে পরেছিলাম। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবার লিখছি। কিন্তু আর লিখতে পারছি না ভাই। চোখের জল কলমের কালি দুই শুকিয়ে গেলো। তোমরা কেমন আছো জনিয়ো। তার কিছু খবর দাও না কেন? না সেটুকুও মানা করেছে? ঠিক সময় মত সে ওষুধ খায় তো? কেবলই কিটস্ কে স্বপ্ন দেখছি। তার পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যামি ব্রাউন পাথরের মত। ভালোবাসা নাও। 

ইতি
তোমার নজরুল

বিঃদ্রঃ এই চিঠিটি শ্রুতি লিখন দ্বার তৈরি করা হয়েছে। তাই ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে কৃতজ্ঞ করবেন|

সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১২

এলোমেলো কবিতা-৪( ২৬.১১.১২)

১।ছুঁয়ে যায় ছুঁয়ে যাক
                 দূরে নয় কাছে থাক,
এতো হৃদয়েরই ডাক
                 জীবনেরই বাঁক।

২। তুমি রং তুলিতে আঁকা ছবি
    নাকি সায়র মাঝে চাঁদের প্রতিচ্ছবি।

৩। মেঘের ওপর মেঘ তার ওপরে বাড়ি
আর কোনো কথা নয় সব কথাতেই দাড়ি,
তোমার সাথে রইল আমার আড়ি আড়ি আড়ি।

৪। ভালোবাসার বন্ধ দুয়ারে কড়া নাড়ছি একা,
   শরতের এক সকাল বেলা তোমার সাথে দেখা।
   কত রং কত রূপ কত যে সুবাস মাখা
   কত যে ফুটলো ফুল ভরিয়ে প্রাণের শাখা।

৫। প্রেম করবা নায়ক দেইখা বিয়া করবা ছ্যাবলারে,
  গামছা দিয়া গা মুছবা গলা বানবা মাফলারে।

৬। ভালোবাসার রং যেন কই অস্তমানের লালে,
কিংবা ফাগুন কৃষ্ণ চূড়ার আগুন জ্বালা ডালে।

৭। অপেক্ষায় কেটেছে প্রহর
এযে প্রেম ছিল মোর,
বিরহ শোকাতর।

৮। খোলা আকাশ খোলা মন
মেঘ থাকে চেয়ে
ঝড়া পাতা পথ ফেলে
বেদনায় ছেয়ে।

৯। চলে গেলে ধীরে ওগো প্রিয়তম,
ভালোবাসাটুকু রয়ে গেলো জমা।

১০। দেখা হয় কথা হয় না
বোঝ হয় বলা হয় না।

১১। ঝরা পাতার গানে দোলা লাগে প্রাণে
ঝর পাতার গানে গানে  দোলা লাগে প্রাণে প্রাণে।

১২।

১৩। কল্প তরুর কল্পনা
এতো শুধু গল্প না
কথা তো আর অল্প না
মনের রঙের অল্পনা।

রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১২

অদ্বৈত ভালোবাসা ( কবিতা ২৬.১১.২০১২)


অদ্বৈত ভালোবাসা



ধরাতে রাত্রি আসে ভেসে,
ভালোবাসায় শুরু হয়ে ভালোবাসায় মেশে;
ধরাতে রাত্রি আসে ভেসে।

ধরাতে ভালোবাসা এসে,
বুকেতে নেয় জড়িয়ে কলকলিয়ে হেসে;
ধরাতে ভালোবাসা এসে।

তারাগুলি মিটমিটিয়ে জ্বলে,
ওরা সব বিনি ভাষায় ভালোবাসা বলে;
তারা গুলি মিটমিটিয়ে জ্বলে।

মেঘলাকাশের রাজপুত্র আসে
যে শুধু তোমায় ভালোবাসে, যে শুধু তোমায় ভালোবাসে;
মেঘলাকাশের রাজপুত্র আসে।

চঞ্চলা (কবিতা-২৫.১১.১২)



চঞ্চলা 

চঞ্চলা তুমি খঞ্জনারই মতো,
খঞ্জন গঞ্জন আঁখিতে তোমার ভাষা লুকানো শত।
তোমার দীঘল এলো কেশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
কেবল দখিনা বায়।
সেই মৃদু অচঞ্চল হাওয়াও চঞ্চল হয়ে চলে বেগে
আমার তন্দ্রা ছুটে যায়; চকিতে উঠি জেগে।
চঞ্চল বায়ু মৃদু মৃদু শিষ কেটে আমার কানে
কানে বলে ওঠে, কে ভালোবাসতে জানে?
কে ভালোবাসা চায়? আবার সব নীরব হয়।
শুধু জেগে রয়
স্তব্ধ খোলা বাতয়ন, প্রানের আকুতি ভরা অন্ধকার,
বিভীষিকাময় সময় আর
নিস্তব্ধ আমি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি চাতক হয়ে থামি
কেবল ভালোবাসার এক ফোঁটা স্বচ্ছ জলের জন্য।
বন্য আমায়, পূর্ণ প্রাণে ভালোবেসে করো ধন্য, হবো ধন্য।

চরিত্র( সৈয়দ তাওহীদ হোসেন রেজা) ২৫.১১.১২- কবিতা

প্রয়াত সৈয়দ তাওহীদ হোসেন রেজা ভাইয়ের কথা মাঝে মাঝেই মনে হয়। খুব মজার মানুষ ছিলেন। তিনি নিয়মিত কবিতা লিখতেন বলে শুনেছি। জানি না তাঁর কোন কবিতার ডায়েরি কিংবা খাতা তাঁর পরিবার কিংবা নিয়াযুল ইসলামের কাছে আছে কিনা। খুঁজে পেলে হয়ত তাঁর লেখার একটা ছোট সংকলন বের করা যেত। গেল ঈদে গ্রামের বাড়িতে পুরোনো ফাইল পত্রের মাঝে ( উৎসুক, একুশের সংকলন ২০০৪) এক পাতার একটা কবিতার সংকলন খুঁজে পাই। তাতে রেজা ভাই সহ অনেকের কবিতা ছিল। ওখান থেকে রেজা ভাইয়ের একটি কবিতা তুলে দিলাম। পরে সময় পেলে আরো দেব। 

চরিত্র
সৈয়দ তাওহীদ হোসেন রেজা

আমরা হালায় মানুষ খারাপ, চরিত্র ভাই শক্ত
বাংলা লইয়া প্যাচাল পারি ইংরেজীটার ভক্ত।
“গুডমর্নিং” শুরু করি “গুডনাইট” কই শ্যাষ-
বাইরে হালায় চিল্লানি দেই সোনার বাংলাদ্যাশ।
চেয়ার কমু, টেবিল কমু, মাছের বেলায় ফিশ
বড় জায়গায় গেলে পরে বাংলা কমু ? ইশ!
আব্বা গোরে ড্যাডি ডাকি আম্মা গোরে মাম
মাইনকা চিপায় পড়লে পরে বাংলা শিগাইবাম।
একুশ আইলে কাইন্দা মরি! শহীদ মিনার যাই-
তর তাজা ঐ পরান গুলান এমনিই গেল ভাই?
এই সময়ে সভা করি মিছিলেরই আগে
দিনডা গেলে আবার মনে বিদেশ প্রীতি জাগে।
আমরা হালায় বহুত খারাপ সবাই স্বার্থ নিজ
বাংলা মা তুই জন্ম দিছস আজব কিছু চিজ!
সময় হল শেষ কথা কই গুড বাই, গুডবাই-
যাব্বে হালায় ভুল করলাম! ফরগিভ মি ভাই।।

শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১২

আষাঢ়ে গল্প ( কবিতা ২৫.১১.২০১২)

আষাঢ়ে গল্প


হঠাৎ সেদিন ঢাকার পথে দেখি বড় গর্ত,
গল্প তবে বলেই ফেলি কিন্তু আছে শর্ত।
গল্প  তো নয় সত্যি কথা রাখবে গোপন করে,
নইলে পিলে ছিলে আশ্বিনে তাল পড়বে জোড়ে জোড়ে।
পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি সবে গর্ত ছাড়িয়ে,
ধাক্কা খেয়ে গর্তে পড়ে গেলাম হারিয়ে।
কুল কিনারা পাই না কোনো আঁধার কালো রাত,
ভাবছ এসব গর্ত হবে মাত্র কয়েক হাত।
কিন্তু মশায় ভুল ভেবেছ কোথায় কিসের কি!
ঘন্টা তিনেক গর্ত ধরে পড়ছি তো পড়ছি।
কোথাও কোনো থই মেলে না , মেলে নাকো মাটি,
মিথ্যে কথা একটুকু নয় পুরো কথাই খাঁটি।
হঠাৎ করে পেলাম মাটি, মাটি কোথায় কাদা,
অন্ধকারে হাত-পা নিজের যায় না দেখা দাদা।
আঁধার যখন চোখ সয়ে যায় দেখি সুড়ঙ পথ,
ললাট ফেরে এলাম কোথা দারুন এক বিপদ।
আঁধার সুড়ঙ হাতরে হাঁটি প্রায় ঘন্টা চারেক,
ভয়ে আমার হাত পা কাঁপে, চাই না ফিরে বারেক।
ভব লীলা সাঙ্গ হলো, এবার বোধহয় শেষ।
মাঝে মাঝে দেখি চেয়ে যমরাজের ওই কেশ।
ভাগ্য ভালো হঠাৎ দেখি সুড়ঙ শেষে আলো,
জমাট আঁধার ঘুচে গেলো রাত্রি পোহালো।


সুড়ঙ শেষে আলোর দেশে যেই দিয়েছি পা,
বলব কি আর কান্ড দেখে মুখ হয়ে যায় হা !
স্বর্ণ লতার পর্ণ কুটির গাছের আগায় দোলে,
এদিক ওদিক দুলছে যেন শুয়ে মায়ের কোলে।
কোথায় ধুলো কোথায় ধুয়ো কোথায় ইটের বাড়ি,
কোথাইবা ছোটা ছুটি কিংবা দমের গাড়ি।
কেবল দেখি শান্ত সবুজ রোদে কনক মাখা,
দেখলে যেন মনে হবে রঙ তুলিতে আঁকা।
পথের মাঝে পথ হারিয়ে সবুজ পথে চলা,
এ যেন এক রূপকথারই দেশের গল্প বলা।
কোথাও নেই ছন্দ পতন গদ্যে পদ্যে মিল,
চাঁদের আলোর নদীর জলে ঢেউ খেলা ঝিলমিল।
পেছন থেকে মধুর স্বরে বলল “তুমি কে?”
ঘুরেই দেখি নীল পরি এক রূপকথারই মেয়ে।
মাথার ওপর আলোর ঝালর ঘুড়ছে ছুঁয়ে বৃত্ত,
দেখলে তুমি ভাবেব বোধ হয় আপন প্রাণের নৃত্য।
পিঠ থেকে তার বের হয়েছে শুভ্র নীলে ডানা,
দেখতে যেন বেশ হয়েছে পায়রা পাখির ছানা।
নীল বসনে দেহ ঢাকা নীল করেছে চুরি,
তাই তো আকাশ নীল হারিয়ে ওড়ায় সাদা ঘুড়ি।
বলল হেসে “এই ছেলেটা কোথায় বাড়ি কোথায় তোমার দেশ?
এমন কেনো তোমার পোষাক? এমন বিষম বেশ?
কোথায় তোমার রঙিন ডানা, কোথায় রঙিন পালক?
কোথায়ই বা শুভ্র বসন, হাতে জাদুর গোলক?”
ভূলোক আমার আপন বাড়ি আপন ঠিকানা,
কেমন করে এলাম হেথা ঠিক তা জানি না।
মানুষ আমি নির্গুনে গুন নামটি আমার স্নিগ্দ,
তোমার দেশটা দেখে আমি হয়ে গেছি মুগ্ধ।
আমার মনে কল্পনাতে এমন দেশটি আঁকা
স্বপ্ন মাঝে আনাগোনা চেতনাতে রাখা।
অবাক হয়ে বলল পরি আমার সাথে চলো,
পরির রানি লাল পরি মা তাঁকে সবই বলো।
তিনি হলেন দেশের রানি সকল পরির মাতা
সব কিছুতে হবেন সামিল যত আছে ব্যাথা।
দেখলে তোমায় খুশীই হবেন করবে কত যতন।
বুকে তোমায় জড়িয়ে ধরে ডাকবে মানিক-রতন।
নীল পরিটা উড়িয়ে নিল আমায় অনেক দূরে,
যেথায় আছে রানির মহল বিশাল জায়গা জুড়ে।
নিদ মহল আর সাজ মহলে কত রকম সাজ,
শত পরি ঘুরছে হেসে মাথায় হীরের তাজ।
হেসেল ঘর আর আম মহলা রং মহলের সাথে,
ফুল বাগান “রানীর কুটির” আছে লেখা তাতে।
আমায় দেখে অবাক সবাই ফ্যালফেলিয়ে দেখে,
কেউবা আবার প্রশ্ন করে এই ছেলেটা কে?
নাম না জানা রঙিন ফুলের সুবাস ওঠে মেতে;
রঙিন ফড়িং, প্রজাপতি দেখি উড়ে যেতে।
রোদে-আলোয় মুখ দেখিয়ে সব উঠেছে হেসে।
অবাক হয়ে ভাবছি আমি এলাম এ কোন দেশে।
বাগান তো নয় স্বর্গ যেনো নেই তুলনা তার,
চোখ ফিরিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখছি বারংবার।
তারই পাশে ঝর্ণা আছে, স্বচ্ছ জলের ধারা,
পানির ভেতর মাছের মত ভাবছি এরা কারা?
হঠাৎ করে মাছ কুমারি বুক উঁচিয়ে বলে
আমরা হলাম মৎস্য দেবী বাস করি এই জলে।
অবাক হবার আরো বাকি  সবে মাত্র শুরু
পরির দেশে ভয় কাটে না বুকটা দুরু দুরু।
অমৃত রস চলছে বয়ে প্রবাহিনীর ধারা
পাত্র ভরে যাচ্ছে নিয়ে রানির দোসর তারা।
সামনে দেখি চড়ছে ঘুড়ে অবাক রঙের পাখি,
হলুদ, কালো, সবুজ, নীল আর হালকা করা খাকি।
কারো পাখায় ডোরা কাটা কারো নীলে ছোপ,
কেউবা আবার ডাকছে জোরে পাশেই তাদের ঝোঁপ।
সামনে যত এগিয়ে চলি অবাক তত বাড়ে,
হঠাৎ করে একটি জিনিস আমার নজর কাড়ে।
মাটি ফুঁড়ে গল গলিয়ে উঠছে হীরা-মানিক,
লোভে জিভে জল এল তাই আমিও নিলাম খানিক।
কান্ড দেখে পরিরা সব হেসেই কুটিকুটি,
ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছি অবাক আঁখি দুটি।
নীল পরিরে সুধাই আমি হাসছে কেনো এরা?
কেনোই বা হীরার খনির চারদিকে নেই বেড়া?
পরি বলে এ দেশ হল সোনায় গড়া, হীরে দেশের মাটি
আমার দেশের পরিরা সব এক্কেবারে খাঁটি।
হীরে সোনা সস্তা জিনিস আক্রা চরিত গুণ।
তাইতো সবাই লোভ ত্যাগিয়া চাইছে যে সদগুণ।
সত্যবাদি, সদাচারি, পরোপকারি জন,
সক্কলে তা ভালোবাসে পরিপাটি মন।
লোক ঠকানো, চুরি ধারি পালিয়ে গেছে কবে,
সত্য ধ্বজা আকাশ পানে, স্লোগান ধরে সবে।
আমার দেশের শান্তি দেখো; এহেন নাই কোথা,
পরিরা সব শান্তি সুখে ঘুঁচেছে সব ব্যাথা।
এখন সবাই  সদগুন,সদ চর্চায় মত্ত
আমার দেশের সবার এখন শুভ্র রঙের চিত্ত।
অবাক হয়ে ভাবছি আমি এমন যদি হতো,
আমার দেশের সবাই যদি এই গুণ সব পেতো!
দুখ গুলি সব পালিযে যেতো সুখের জোয়ার জলে,
দোষ গুলি সব হারিয়ে যেতো, খাঁটি সত্য বলে।
ততক্ষণে এলাম চলে লাল পরি মার কুটির,
কুটির কোথায় দেখি চেয়ে ফুলের গাছের ভিড়।
তাতে লেখা “ তোমার আছে দুঃখ যতো আমায় করো দান,
সুখ গুলো সব তোমায় ঘিরে ডেকে উঠুক বান।“
পরির রানীর কোথায় গদি, কোথায় মসনদ্,
কোথায় গেলো পাইক পেয়াদা কোথায় সভাসদ?
প্রজাপতির পাখায় ঢাকা ছোট্ট একটা দ্বার,
দুই দিকে তা ছড়িয়ে গেলো রানি হলেন বার।
নত হয়ে সালাম দিতেই বলেন রানি “ একি করো তুমি?”
আর দেবে না এমন ধারা বলল কপাল চুমি।
এবার বলো কে বা তুমি কোথায় তোমার বাড়ি?
কেন তুমি এলে হেথা আপন আবাস ছাড়ি?

..........................................................চলবে

শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১২

রাজনীতি ভূত- কবিতা ( ০৫.১০.২০১২)




         রাজনীতি ভূত
“রাজনীতি ভূত’’ নাম নিয়ে ভাই শুরু করলাম ছড়া
এই দেশে সব কীর্তি গুলো “রাজনীতি ভূত’’ গড়া
সইতে এত না পেরে ভূত হাত পা ছুড়ে শেষে,
কঙ্কাল রাম সভাপতি বলল জোড়ে কেশে
শোনো শোনো ভূত জগতের আছো ভূতং যতো,
ঢের সয়েছি, আর পারি না, আর সইব কতো?
যে সব কাজ করব মোরা করছে টেটন মানুষ,
যে করে হোক আনতে হবে টেটন গুলির হুঁশ।
ভূতের দেশের আন্দোলনও হবে ভূতের মতো,
চারদিকে সব ছড়িয়ে পরো লক্ষ-হাজার-শত।
“রাজনীতি ভূত” দেখবে যত ধরবে তাদের চেপে,
তার আগে ওর ঘাড়ের বহর দেখবে ফিতেয় মেপে।
কত আছে জোড় ঘাড়ে তার কত আছে শক্তি,
ধরবে ঠেসে এমন জোড়ে সহজে নেই মুক্তি।
বাপ-মা বলে যখন দেবে বহুত জোড়ে চিল্লানি,
রক্ত উঠে লাল হলো কি দুমসো মোটা মুখখানি?
লাল,নীল আর কালোর সাথে আছে শ্যাওড়া রাম,
পাপ করে কেউ পার পায় না দিতে হবে দাম।
হয় জীবনটা নয়ত সাজা সবই ভূতের কাজ,
ছেড়ে তোমায় দিতেই হবে রাজনীতি ভূত আজ।